সিবিএন ডেস্ক:
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় সেখানে পর্যটকদের রাত্রীযাপন নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে সরকার। আগামী ১ মার্চ থেকে এরকম নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হতে পারে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি দ্বীপ রক্ষায় গঠিত আন্তঃ মন্ত্রণালয় কমিটি সরকারের প্রতি এ সুপারিশ করেছে।

দ্বীপে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ হতে পারে খবরে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা ও হোটেল ব্যবসায়ীরা। দ্বীপের জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকা ও ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা ঝুঁকিতে পড়বে।

দ্বীপে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ ও স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হতে পারে এমন খবর শুনেছেন জানিয়ে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমদ বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মানুষের বসতি। এসব মানুষের মধ্যে পাঁচ হাজার মানুষের রোজগার আসে পর্যটন খাত থেকে। সরকার যদি দ্বীপে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ ও স্থানীয়দের সরানোর সিন্ধান্ত নেয়, তাহলে ওইসব মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে স্থানীয়রা বেকার হয়ে পড়বে।’

সম্প্রতি মিয়ানমার সেন্ট মার্টিনের মালিকানা দাবি করে নিজেদের মানচিত্রে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলে। পরে বাংলাদেশের প্রতিবাদের মুখে তাদের মানচিত্র থেকে তা বাদ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডেরই একটি অংশ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে এ অংশকে নিজেদের বলে দাবি করেছে। এ দ্বীপ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত খুব কাছে, তাই আমরা খুবই চিন্তিত।’ দ্বীপবাসীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

জানা গেছে, দ্বীপ রক্ষায় গঠিত আন্তঃ মন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, রাতে অবস্থান করতে না পারলেও পর্যটকরা দিনের বেলায় দ্বীপটি ঘুরে দেখতে পারবেন। এছাড়া সেন্ট মার্টিনের ছেড়া দ্বীপ ও গলাচিপা অংশে পর্যটকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সেন্ট মার্টিনে নতুন করে কোনও রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। নাফ নদী, দ্বীপে যাওয়া-আসার পথে এবং মূল দ্বীপে কোনও প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা যাবে না। দ্বীপটির সৈকতে মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করা হবে। দ্বীপে রাতের বেলা কোনও আলো জ্বালানো যাবে না।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, ‘দ্বীপ রক্ষায় রাত্রিযাপন নিষিদ্ধসহ সরকার নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সেগুলো লিখিত আকারে চিঠি পাওয়ার পর দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব বলেন, ‘অতিরিক্ত লোকজন ও দালানকোঠার ভারে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির মধ্যে রয়েছে। এ দ্বীপকে রক্ষা করতে সরকার কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আন্তঃ মন্ত্রণালয় কমিটি এ সিন্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। তবে সেবিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও চিঠি পাইনি।’

দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাসিম বলেন, ‘দ্বীপবাসী এক সময় মাছ শিকার করে জীবন যাপন করতো। যখন থেকে দ্বীপে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়, সে-সময় থেকে এখানকার মানুষ পর্যটন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ করে পর্যটকদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ হলে দ্বীপবাসী বেকার হয়ে পড়বে এবং তাদের কষ্টে দিন কাটাতে হবে।’

সেন্ট মার্টিন হোটেল অ্যান্ড কটেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দ্বীপে হোটেল ও কটেজ ব্যবসায়ীরা সেখানে কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সামনে পর্যটকদের মৌসুমে দ্বীপে রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ হলে লোকসানে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত দিতে হবে।’ তিনি ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সরকারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান। অপর এক কটেজ ব্যবসায়ী ছিদ্দিকুর রহমানও তার সঙ্গে এক মত প্রকাশ করেন।